আরবি হাদিসঃ
وَعَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : كَانَتْ يَدُ رَسُولِ اللهِ ﷺ اليُمْنَى لِطُهُورِهِ وَطَعَامِهِ، وَكَانَتِ الْيُسْرَى لِخَلائِهِ وَمَا كَانَ مِنْ أذَىً . حديث صحيح، رواه أَبُو داود وغيره بإسنادٍ صحيحٍ
বাংলা অনুবাদঃ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডান হাত তাঁর অজু ও আহারের জন্য ব্যবহার হত এবং বাম হাত তাঁর পেশাব-পায়খানা ও নোংরা স্পর্শ করার সব ক্ষেত্রে ব্যবহার হত।’
[আবু দাউদ : ৩৩, আহমদ : ২৪৭৯৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
” أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَجْعَلُ يَمِينَهُ لِطَعَامِهِ وَشَرَابِهِ وَثِيَابِهِ، وَيَجْعَلُ شِمَالَهُ لِمَا سِوَى ذَلِكَ “
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা, পান করা ও পরিধানের জন্য তার ডান হাত ব্যবহার করতেন, এ ছাড়া অন্যান্য কাজের জন্য তিনি তার বাম হাত ব্যবহার করতেন”।
(আবু দাউদ : ৩০)
ইয়াস ইব্ন সালমা ইব্ন আকওয়া থেকে বর্ণিত, তার পিতা তাকে বলেছেন:
أَنَّ رَجُلًا أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِمَالِهِ، فَقَالَ: ” كُلْ بِيَمِينِكَ “، قَالَ: لَا أَسْتَطِيعُ، قَالَ: ” لَا اسْتَطَعْتَ مَا مَنَعَهُ إِلَّا الْكِبْرُ “، قَالَ: فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তার বাম হাতে খেল, তিনি বললেন: “তোমার ডান হাতে খাও”। সে বলল: পারি না। তিনি বললেন: “তুমি কখনো পারবে না, অহংকার ব্যতীত কোন কারণ তাকে বাঁধা দেয়নি”। তিনি বলেন: সে তার ডান হাত কখনো মুখে তুলতে পারেনি।
(মুসলিম : ৩৭৭৩)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“مَنْ أَكَلَ بِشِمَالِهِ أَكَلَ مَعَهُ الشَّيْطَانُ، وَمَنْ شَرِبَ بِشِمَالِهِ شَرِبَ مَعَهُ الشَّيْطَانُ”
“যে তার বাম হাতে খায়, শয়তান তার সাথে খায়। আর যে তার বাম হাতে পান করে, শয়তান তার সাথে পান করে”।
(আহমদ : ২৩৯১৯)
ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
( إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ ، وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِينِهِ ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ ، وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ ) .
“যখন তোমাদের কেউ খায় সে যেন ডান হাতে খায়, এবং যখন পান কর সে যেন ডান হাতে পান করে। কারণ শয়তান তার বাম হাতে খায় ও বাম হাতে পান করে”।
(মুসলিম : ২০২০)
জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
” لَا تَأْكُلُوا بِالشِّمَالِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِالشِّمَالِ “
“তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, কারণ শয়তান বাম হাতে খায়”।
(মুসলিম : ২০১৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব নিষেধাজ্ঞা থেকে স্পষ্ট হয় যে, বাম হাতে খাওয়া, পান করা ও আদান-প্রদান করা নিষেধ ও অবৈধ এবং শয়তানি কর্মের অন্তর্ভুক্ত।
অতএব প্রমাণ হল বাম হাতে পান করা যাবেনা, কারণ বাম হাতে পান করা শয়তানি কর্ম, আল্লাহ যা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাম হাতে পান করার অর্থ শয়তানের দলভুক্ত হওয়া, আল্লাহ যার থেকে সর্তক করেছেন, কারণ শয়তান আমাদের চিরশত্রু, সে তার দলকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান করে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا ۚ إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ
"শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়।"
(সুরা আল ফাতির : ৬)
হ্যাঁ কোন অপারগতা, হাতে জখম ও শরীয়ত অনুমোদিত কারণ থাকলে বাম হাতে পানাহার করা বৈধ।
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
… ثُمَّ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحٍ فَرَفَعَهُ عَلَى يَدَيْهِ فَشَرِبَ لِيَرَى النَّاسُ أَنَّهُ لَيْسَ بِصَائِمٍ
“… অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্র তলব করলেন, তিনি তা উভয় হাতের ওপরে রাখলেন ও পান করলেন, যেন মানুষেরা দেখে তিনি সিয়াম অবস্থায় নেই”।
(আহমদ : ১৪২৩৪)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ বলেনঃ
وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ
"যারা ডান দিকে থাকবে, তারা কত ভাগ্যবান।"
[The Companions of the Right Hand,- what will be the Companions of the Right Hand?]
(সুরা ওয়াক্বিয়া : ২৭)
অন্যত্র বলেনঃ
وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ
"বামপার্শ্বস্থ লোক, কত না হতভাগা তারা।"
[The Companions of the Left Hand,- what will be the Companions of the Left Hand?]
(সুরা ওয়াক্বিয়া : ৪১)
বিচারদিবসে ডান হাতে আমলনামাঃ
আল্লাহ্ বলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ
"যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে"
[Then he who is given his Record in his right hand,]
فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا
"তার হিসাব-নিকাশ সহজে হয়ে যাবে"
[Soon will his account be taken by an easy reckoning,]
(সুরা আল ইনশিক্কাক : ৭, ৮)
এবার, একটি কথা চিন্তা করুন, ডানহাত, ডানপা এবং বামহাত, বামপা সবগুলোইতো আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন! কিন্তু কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন জাগে না যে, কেন রাসূল (সাঃ) ডানহাত দিয়ে খেলেন? বামহাত দিয়েও তো তিনি খেতে পারতেন, কিন্তু কেন তিনি বামপা দিয়ে টয়টেলে প্রবেশ করলেন? ডানপা দিয়েওতো প্রবেশ করতে পারতেন। তিনি ভালো কাজের জন্য ডান এবং নিকৃষ্ট কাজের জন্য বামহাতকে কেন বেছে নিলেন? এসব বিষয় নিয়েই আমরা এখানে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ।
বাস্তবে আমরা বেশিরভাগ মানুষ আমাদের প্রায় সব কাজই ডানহাত দিয়ে করি। এর কারণ আমাদের মস্তিষ্কের ডান অংশ বেশি অনুভূতিশীল।
বাস্তবতার আলোকে ডানের ব্যবহারঃ
১) মটরযানের পিকআপ :
আপনি লক্ষ্য করবেন গাড়ির দিকে, পিকআপ বা এক্সিলেটর কিন্তু ডান দিকেই আছে এবং অনুরূপভাবে মোটর সাইকেলেরও ডান দিকে।
২) ডান হাতে তাসবীহ ও অন্যান্য গণনা করা :
আপনি লক্ষ্য করবেন, মানুষেরা বিভিন্ন সময় ডান হাতেই বেশঅ গণনা করে থাকে, বাম হাতে কম। আর সাধারণত গণনার কাজ ডান হাতে অনেক সুবিধা এবং তাড়াতাড়ি গণনা করা হয়। কিন্তু এই হিসাব যদি আপনি বাম হাতে করেন, তাহলে অসুবিধা হবে এবং তাড়াতাড়িও হবে না। বিশ্বাস না হলে একবার প্র্যাকটিস করে দেখুন।
৩) ডান হাতে চুল আঁচড়ানো :
প্রায় সব মানুষই ডান হাতে চুল আঁচড়ায়। ডান হাতে চুল আঁচড়ানোতে সুবিধা এবং আঁচড়ানোও অনেক সুন্দর হয়। কিন্তু বাম হাত দিয়ে চুল আঁচড়ানোতে সুবিধা হয় না বরং চুলগুলো আরো এলোমেলো হয়ে যায়। একবার না হয় পরীক্ষা করুন।
৪) ডান হাতে মোবাইল টাচ :
অধিকাংশ মানুষ ডান হাতে বাটনওয়ালা মোবাইল চাপে। কেননা এতে সুবিধা হয়। কিন্তু আপনি যতি বাটনওয়ালা মোবাইল বাম হাতে চাপেন তাহলে খুব একটা সুবিধা হবে না। একটা নাম্বার তাড়াতাড়ি উঠাতে পারবেন না। আপনি লক্ষ্য করবেন লোকজন টাচ ফোন ব্যবহার করার সময় বাম হাতে রেখে ডান হাত দিয়ে টাচ করে, কেননা এতে সুবিধা হয়।
৫) ডান হাতে লেখা :
কোনো কিছু লেখার সময় মানুষ ডান হাতেই লিখে। কেননা এতে লেখা সুন্দর এবং তাড়াতাড়ি হয়। তবে যারা বামহাতি তারা ব্যতীত। বাম হাত দিয়ে লিখলে লেখা সুন্দর হয় না, তাড়াতাড়িও হয় না। পরীক্ষার হলে আপনি যদি বাম হাত দিয়ে লিখেন তাহলে দেখবেন পাঁচটি প্রশ্নে উত্তর দিতে পারবেন না। একটার উত্তর দিতে না দিতেই পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাবে। এটাই বাস্তব।
৬) ডান হাতে মুছাফাহা করা :
আপনি মুছাফাহার বিষয়টি খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করবেন যে, মুসলিম, ইয়াহূদী, খ্রীস্টান, কাফের, মুশরিক সকলেই যখন একে অপরের সাথে সাক্ষাত করে, তখন তারা ডান হাতে মুছাফাহা করে। কেননা সকলেই এই কাজটি ডান হাতে হওয়াটাই বেশি পসন্দ করে।
৭) হঠাৎ পড়ে যাওয়া রূখতেঃ
আমরা সবাই এ পর্যায়ে ডান হাত ব্যবহার করি স্বভাবগতভাবে। বাম হাত ব্যবহার করলে হাত ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেখুন একবার পরীক্ষা করে।
বামহাতি সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলছেঃ
বামহাতি কেন হয়:
কোনো কিছু দেখার সময় মানুষ দুই চোখ একসাথেই ব্যবহার করে, কোনো কিছু শোনার সময়ও দুই কান একই সাথে ব্যবহার করে মানুষ। কিন্তু কাজ করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই প্রয়োজন হয় এক হাতের। প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বাম কানে বেশি শোনে, প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ বাম চোখে বেশি দেখে। কিন্তু শোনা বা দেখার সময় একসাথে দুই চোখ বা কান ব্যবহার করে বলে আলাদা করে কোনো পার্থক্য চোখে পড়ে না। কিন্তু চোখে পড়ে বাম হাতে কাজ করার ক্ষেত্রে।
ঠিক কী কারণে মানুষ বামহাতি বা ডানহাতি হয় এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো আবিষ্কার হয়নি। জেনেটিক কারণে, হরমোনজনিত কারণে কিংবা গর্ভাবস্থায় গর্ভে ভ্রুণের অবস্থানের উপর নির্ভর করে কোন হাত বেশি শক্তিশালী হবে। এমনকি গর্ভাবস্থায় মায়ের বয়স, মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার উপরও নির্ভর করে বলে ধারণা করা হয়। কোনোটিকেই একমাত্র কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা না হলেও জেনেটিক কারণকেই প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হয়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হতো, কোন হাত শক্তিশালী হবে এর জন্য একটি মাত্র জিন দায়ী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত এক পেপারে দেখা গিয়েছে, বামহাতি হবার পেছনে একটি জিন নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু জিনের একটি নেটওয়ার্ক। আগে PSCK6 নামক একটি জিন বামহাতি হবার পেছনে রয়েছে বলে ধারণা করা হতো। নতুন আবিষ্কারে এই জিনের সাথে আরো বেশ কিছু জিন পাওয়া গিয়েছে যারা একসাথে দায়ী বামহাতি হবার পেছনে। বামহাতি হবার পেছনে অন্তত ৪০টি ভিন্ন ভিন্ন জিনের প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এছাড়া, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবৃত্তীয় বিভাগের প্রধান ড. টিম ক্রোর মতে, সম্ভবত মানবদেহের পিসিডিএইচ-১১এক্স জিন হাতের ব্যবহারের এ বিষয়টি নির্ধারণ করে দেয়। অক্সফোর্ডের আরেক বিশেষজ্ঞ ড. ফ্রাঙ্কসের মতে, ক্রোমোজোম-২ এর মধ্যে থাকা এলআরআরটিএম-১ জিনের জন্য মানুষ হাত ব্যবহারে আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। এ ছাড়া মাতৃগর্ভে থাকা ডাই ইথাইল স্টিলবোস্টেরলের সংস্পর্শ বাঁ-হাতি হতে সহায়ক।
আসলে মানুষের কোন হাত কেন অন্যটির থেকে বেশি শক্তিশালী হয় এর কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর এখনো পর্যন্ত অজানাই রয়ে গিয়েছে।
মানুষের ক্ষেত্রে ডানহাতিদের সংখ্যা অনেক বেশি, প্রতি ১০০ জনের ৯০ জন, অর্থাৎ বামহাতি প্রতি ১০০ জনে মাত্র ১০ জন। মানুষের ক্ষেত্রে এই অসমতার জন্য মূলত দায়ী মানুষের একটি বিশেষ গুণ, যা অন্য প্রাণীদের নেই- তা হলো ভাষা।
মস্তিষ্কের বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে ভাষা কিংবা কথা বলার দক্ষতা। একইসাথে মস্তিষ্কের বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের ডান দিক। ফলে বেশিরভাগ মানুষ ডানহাতি হয়। অন্যদিকে খুব কম সংখ্যক মানুষের ভাষা দক্ষতা তৈরি হয় মস্তিষ্কের ডান দিকে, ফলে তারা বামহাতি হয়। অন্য প্রাণীদের মানুষের মতো কথা বলার দক্ষতা না থাকায় তাদের কোনো একদিক আলাদা করে শক্তিশালী হয়ে পড়ে না। ফলে তাদের বামহাতি-ডানহাতির অনুপাত থাকে সমান। তবে এর সাথেও জিনগত কিছু কারণ জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু কোন কোন জিন দায়ী তা জানা না থাকায় এ ব্যাপারেও কোনো নিশ্চিত উত্তর পাওয়া যায় না।
বামহাতিদের বিভিন্ন জটিল রোগঃ
১) মানসিক সমস্যা:
কিছু কিছু ক্ষেত্রে বামহাতিরা প্রাকৃতিক সুবিধা ভোগ করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্টো অনেক সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয় তাদের। বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, বিশেষ করে সিজোফ্রেনিয়ার মতো ভয়াবহ সমস্যার শিকার হতে হয় বামহাতিদের অনেক বেশি।
Left-handed people more likely to have mental disorders like schizophrenia.
২) জন্মগত ত্রুটি:
নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণকারী বেশির ভাগ শিশুই বাঁ-হাতি হয়। গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের সময় সন্তানের অবস্থান এবং প্রিম্যাচিউর (অর্থাৎ ২৪ সপ্তাহের আগে এবং জন্মগত ওজন ১.৫ কেজির কম হলে) হলে বামহাতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
Left-handed DNA found - and it changes brain structure.
৩) কম আয়ু:
১৯৮৯ এবং ১৯৯১ সালে প্রকাশিত দুটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে বলা হয়েছিল, বাঁ-হাতিদের জীবনকাল ডানহাতিদের চেয়ে কম হয়।
Do left-handed people really die young?
৪) দুর্ঘটনার শিকার:
বিশ্বে বেশির ভাগ যন্ত্র এবং সরঞ্জাম ডান হাতিদের উপযোগী করে বানানো। এ জন্য প্রতিবছর বিশ্বে দুই হাজারের বেশি বাঁ-হাতি বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হন।
Common problems left-handed people face!
৫) বুদ্ধিবৃত্তি ধীরে বাড়ে:
বামহাতি হওয়াটা একটি আশীর্বাদ, দীর্ঘদিনের এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডিলেইডের ফ্লিনডারস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইক নিকোলস প্রমাণ করেছেন, ‘বামহাতিদের মেধাশক্তি মূলত একজন অপরিপক্ক অবস্থায় জন্মগ্রহণকারীর মতো ধীরে ধীরে বাড়ে।’
Right-handers have negligibly higher IQ scores than left-handers: Systematic review and meta-analyses.
৬) বামহাতিদের স্তন ক্যান্সার সম্ভাবনা:
২০০৭ এর একটি গবেষনা তথ্য ব্রিটিশ জার্নাল অফ ক্যান্সারে প্রকাশিত হয়েছে, হাতের পছন্দে ক্যান্সারের ঝুঁকি পরীক্ষা নিয়ে। সমীক্ষায় সুপারিশ করা হয়েছে যে, বামহাতি মহিলারা ডানহাতি মহিলাদের চেয়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যেসব মহিলারা মেনোপজ অনুভব করেছেন তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির পার্থক্য আরও স্পষ্ট।
Left-handedness and risk of breast cancer.
৭) বামহাতিরা পর্যায়ক্রমিক অঙ্গ আন্দোলনের ব্যাধিতে ভোগে:
আমেরিকান কলেজ অব চেস্ট চিকিৎসকগণের ২০১১ সালে প্রকাশিত সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, বামহাতিদের পর্যায়ক্রমিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চলাচল (পিএলএমডি) হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই ব্যাধিটি অনিচ্ছাকৃত, পুনরাবৃত্ত অঙ্গগুলির গতিবিধি দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যা, ঘুমানোর সময় ঘটে, ফলে ঘুমের চক্র ব্যাহত হয়।
Left-handed people more likely to have sleep disorder.
৮) বামহাতিদের সাইকোটিক ডিজঅর্ডার:
২০১৩ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষনা করে মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধা ও বাম এবং ডান স্বেচ্ছাচারিতার উপর।
গবেষকরা সিজোফ্রেনিয়া এবং সিজোফেক্টিভ ডিসঅর্ডারের মতো মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধিযুক্ত রোগীদের অধ্যয়ন করার সময় দেখেন, ৪০ শতাংশ রোগী তাদের বাম হাত দিয়ে লেখার অভ্যাস ছিল।
Psychotic disorders more likely in left-handed.
৯) বামহাতিদের পিটিএসডি রোগ:
২০০৭ এর একটি গবেষনা ট্রাম্যাটিক স্ট্রেস জার্নালে প্রকাশিত হয়। পোস্ট-ট্রমামেটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) এর জন্য প্রায় ৬০০ জনের গ্রুপের একটি ছোট্ট নমুনা গবেষনা করে। গ্রুপে উল্লেখযোগ্যভাবে বামহাতি ছিল। বামহাতের লোকেরা পিটিএসডি-এর উত্তেজনাপূর্ণ লক্ষণগুলিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উচ্চতর স্কোর দেখিয়েছিল।
Left hand preference is related to posttraumatic stress disorder.
১০) বামহাতিদের অ্যালকোহল সেবন পরিমান বেশী:
২০১১ সালে ব্রিটিশ জার্নাল অব হেলথ্ সাইকোলজএত প্রকাশিত এক তথ্যে বোঝা যায় যে, বামহাতিরা ডানহাতিদের চেয়ে বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল পান করার ঝোঁক দেখিয়েছিল।
Handedness and drinking behaviour.
১১) কেবল প্রত্যক্ষ স্বাস্থ্যের ঝুঁকি ছাড়াও অন্য সমস্যা রয়েছে:
ডানহাতিদের সাথে তুলনা করলে বামহাতিদের অন্যান্য আরো অসুবিধা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে কিছু অসুবিধা ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সমস্যার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে।
২০০৯ সালে ডেমোগ্রাফিতে প্রকাশিত তথ অনুযায়ী, বামহাতি বাচ্চারা তাদের ডানহাতি সমবয়সীদের মতো একাডেমিকভাবে ভাল অভিনয়, পড়ালেখা, শব্দভাণ্ডার এবং সামাজিক বিকাশের মতো দক্ষতায় কম পারদর্শী।
Nature’s Experiment? Handedness and Early Childhood Development.
২০১৪ সালে হার্ভার্ডের ইকোনমিক পার্সপেকটিভস জার্নাল এ প্রকাশিত তথ্যে ডানহাতিদের তুলনায় বামহাতিদের আরো কিছু বাহ্যিক সমস্যা সুপারিশ করা হয়:
১) ডিসলেক্সিয়া রোগের মতো আরও শেখার অক্ষমতা রয়েছে।
২) বাহ্যিক আরও আচরণ এবং মানসিক সমস্যা আছে।
৩) কম পড়ায় স্কুল শেষ করে।
৪) এমন চাকরিতে কাজ করে, যার জন্য কম জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন।
৫) বার্ষিক উপার্জন ১০ থেকে ১২ শতাংশ কম থাকে।
বামহাতিরা সহজেই ডানহাতে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারেঃ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো কারণে বামহাতে সমস্যা হলে তারা কাজ করার জন্য ডানহাতে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। কোনো দুর্ঘটনায় বামহাত যদি ভেঙ্গে যায়, তাহলে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিতে তারা সাময়িকের জন্য ডানহাতে নিজেদের অভ্যস্ত করে নেয়। তবে ডানহাতিদের ক্ষেত্রে কাজটা বেশ কঠিন। তারা চাইলেও বামহাতে নিজেদেরকে বামহাতিদের মতো মানিয়ে নিতে পারেনা। বামহাতিদের জন্য এই হাত পরিবর্তনের কাজটা তুলনামূলক সহজ।
কারন, মস্তিষ্ককে নতুন অভিজ্ঞতা দিলে এটি ভালো থাকে। আমরা বার বার যা করি মস্তিষ্ক তাই ধারণ করে এবং স্মৃতি হিসেবে রেখে দেয়। অভ্যাসের বাইরে গিয়ে কিছু করাটাই মস্তিষ্কে নতুন অভিজ্ঞতা প্রদান। এতে মস্তিষ্কের স্মৃতিক্ষয় হওয়া রোধ পায়। স্মৃতিক্ষয় প্রতিরোধ এবং আপনার মনকে উৎফুলস্ন রাখার জন্য ছোট ছোট কিছু মানসিক ব্যায়াম করতে পারেন, যা আপনি বামহাতে করতেন নিয়মিত, তা ডানহাতে করার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে মস্তিককে অভ্যস্ত করে তুলুন ধীরে ধীরে।
মস্তিষ্ককে সজাগ রাখতে মস্তিষ্ককে নতুন অভিজ্ঞা দিলে শারীরিক অনুভূতি- শোনা, দেখা, স্বাদ নেওয়া, গন্ধ নেওয়া, স্পর্শ করা- এসব সঙ্গে মানসিক অনুভূতি যুক্ত হয়ে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশগুলোর মধ্যে আরো বেশি সংযোগ সৃষ্টি করে। নার্ভ কোষগুলো মস্তিষ্কের পুষ্টি উৎপাদন করে- যা নাটকীয়ভাবে স্মৃতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং পার্শ্ববর্তী কোষগুলোকে শক্তিশালী করে তোলে এবং বার্ধক্যজনিত প্রভাবগুলো অনেক বেশি প্রতিরোধী করে তোলে।
বিজ্ঞানীরা গত এক দশক ধরে বামহাতিদের উপর গবেষনা করছেন, যার এখনো কোন সমাধানে আসতে পারেননি, তবে তারা আশাবাদী বামহাতিদেরও চিকিৎসা সম্ভব, যার জন্য নিউর্সোইন্সের আরো কিছু ক্ষেত্র আবিস্কার করতে হবে।
New research challenges a treatment left-handed people receive for mental health.
সংশ্লিষ্ট আরো তথ্যঃ
20 ways being left-handed impacts your health.
Left-Handed People Are Truly Exceptional, According to Science.
20 Struggles Only Left Handed People Will Understand.
Keyword : Islam,Sunnah,Science,Scientific research and islam,Islamic miracle,hadith,science research ,Muslim
Tags:
Islam