শুরু করার পূর্বে জানিয়ে রাখি বাংলা ণত্ব-ষত্ব বিধানের নিয়মগুলো আপনি পেয়ে যাবেন https://www.jhotpotinfo.com/2021/09/explained.html এই লিংকে।
এই অনুচ্ছেদটি পড়ার পর আপনি নিচের প্রশ্ন গুলো উত্তর করতে পারবেন।
১। ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বলতে
কী বোঝ? কত প্রকার ও কী কী উদাহরণ সহ লেখ
অথবা, বাংলা ভাষার শব্দশ্রেণিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
##আপনি কি অনলাইনে টাকা ইনকাম করার জন্য ছোটাছুটি করছেন? সময় থাকতে জেনে নিন এই সহজ উপায় গুলো।##
ব্যাকরণগত অবস্থানের ভিত্তিতে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে যে কয় ভাগে বিভক্ত করা
হয়েছে, তাকেই ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি
বলে।
ব্যাকরণিক শব্দ আট প্রকার। যথা—
ক. বিশেষ্য :
যে
শব্দ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, জাতি,
গোষ্ঠী, সমষ্টি, গুণ বা
অবস্থার নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য বলে। যেমন— থালা, বাটি, টাকা, ঢাকা,
ছাগল, বাঁশ, মাছ,
দয়া, মায়া, সততা।
খ. সর্বনাম :
বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়,
তাকে
সর্বনাম বলে। যেমন—উর্মি একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। সে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। কলেজে
তার উপস্থিতি নিয়মিত। তাকে সব শিক্ষক আদর করেন। এখানে সে, তার, তাকে সর্বনাম।
গ. বিশেষণ :
যে শব্দ দ্বারা বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়ার
দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাপ ইত্যাদি প্রকাশ পায়, তাকে বিশেষণ বলে। যেমন— নীল আকাশ,
সবুজ
বাংলা, প্রথম স্থান, দশ কেজি, শান্ত নদী।
ঘ. ক্রিয়া :
যে শব্দ দ্বারা কোনো কিছু করা, হওয়া, ঘটা ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন—অনয় কাঁদছে। শিউলি
ফুল তুলছে। বৃষ্টি হবে।
ঙ. ক্রিয়া বিশেষণ :
যে শব্দ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে,
তাকে
ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—গাড়িটি দ্রুত চলতে শুরু করল। অনিম জোরে হাঁটে। সামিয়া
গুনগুনিয়ে গান গাইছে।
চ. আবেগ শব্দ :
যে শব্দ বাক্যের অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে মনের বিশেষ
ভাব বা আবেগ প্রকাশ করে, তাকে আবেগ শব্দ বলে।
যেমন—হায়! এটা তুমি কী করলে! উঃ! কী অবস্থা! বাহ্! কী সুন্দর দৃশ্য।
ছ. যোজক :
যে শব্দ একটি বাক্যাংশের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যাংশ অথবা বাক্যস্থিত একটি
শব্দের সঙ্গে অন্য একটি শব্দের সংযোজন,
বিয়োজন
বা সংকোচন ঘটায়, তাকে যোজক বলে।
যেমন—সারা দিন বৃষ্টি হলো তবুও গরম গেল না। তুমি খাবে আর তামান্না পড়বে। ব্যাগটা
শক্ত করে ধরো, নইলে পড়ে যাবে।
জ. অনুসর্গ :
যে শব্দ কখনো স্বাধীনরূপে, আবার কখনো বা
শব্দবিভক্তির ন্যায় ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে অনুসর্গ বলে। যেমন—দিনের পরে রাত আসে। রান্নার জন্য
রাঁধুনি ব্যাকুল।
২। বিশেষ্য কাকে বলে? বিশেষ্যের
শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ আলোচনা কর।
অথবা, বিশেষ্য পদ কাকে বলে?
উদাহরণসহ বিশেষ্য পদের শ্রেণিবিভাগ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, উদাহরণসহ বিশেষ্য পদের
শ্রেণিবিভাগ আলচনা কর।
যে শব্দ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, জাতি, গোষ্ঠী, সমষ্টি, গুণ বা অবস্থার নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য বলে। যেমন— থালা,
বাটি, টাকা, ঢাকা, ছাগল, বাঁশ, মাছ, দয়া, মায়া, সততা।
##আপনি কি অনলাইনে টাকা ইনকাম করার জন্য ছোটাছুটি করছেন? সময় থাকতে জেনে নিন এই সহজ উপায় গুলো।##
কী ধরনের নাম বোঝাচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে বিশেষ্যকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা
যায়-
১। সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য :
যে বিশেষ্য দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছুর নাম বোঝায়, তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন—নজরুল, যমুনা, দোয়েল, আষাঢ়, বঙ্গভাষা ইত্যাদি।
২। সাধারণ বিশেষ্য :
যে বিশেষ্য দ্বারা সামগ্রিকভাবে একটি শ্রেণিকে বোঝায়, তাকে সাধারণ বিশেষ্য বলে। যেমন—মানুষ, কবি, নদী, পাখি, মাস, ভাষা ইত্যাদি।
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা অনুসারে
—
ক. মূর্ত বিশেষ্য :
ইন্দ্রিয় দ্বারা যে বস্তুর ঘ্রাণ নেওয়া যায় কিংবা যাকে দেখা, পরিমাপ করা বা স্পর্শ করা যায়, তাকে মূর্ত বিশেষ্য বলে। যেমন—রুটি, বাটি, বেগুন, ফুল ইত্যাদি।
খ. ভাব বিশেষ্য :
ইন্দ্রিয় দ্বারা যার ঘ্রাণ নেওয়া,
দেখা, পরিমাণ করা, স্পর্শ করা যায় না
অর্থাৎ নিবস্তুক অবস্থা ও মনোগত ভাব বোঝায়,
তাকে
ভাব বিশেষ্য বলে। যেমন—রাগ, ক্ষমা, আনন্দ, বেদনা ইত্যাদি।
গণনযোগ্যতা অনুসারে—
ক. গণন বিশেষ্য :
যে বিশেষ্যকে সংখ্যা দিয়ে গণনা করা যায় এবং যার বহু বচন করা চলে, তাকে গণন বিশেষ্য বলে। যেমন—ফল, গরু, হাঁস, মুরগি, মাছ, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি।
খ. পরিমাপ বিশেষ্য :
যে বিশেষ্যকে সংখ্যা দ্বারা গণনা করা যায় না, কিন্তু পরিমাপ করা চলে, তাকে পরিমাপ বিশেষ্য
বলে। যেমন—লবণ, তেল, চিনি, আটা, ডাল, চাল ইত্যাদি।
গ. সমষ্টি বিশেষ্য :
যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো দল বা গোষ্ঠীর একক বা সমষ্টি বোঝায়, তাকে সমষ্টি বিশেষ্য বলে। যেমন—ছাত্র, জনতা, পুলিশ, মালিক, শ্রমিক, সভা, সমিতি, সংসদ, শ্রেণি, ঝাঁক, দল ইত্যাদি।
সজীবতা অনুসারে—
ক. সজীব বিশেষ্য :
যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো জীবন্ত ও সক্রিয় সত্তার সাধারণ শ্রেণিকে বোঝায়, তাকে সজীব বিশেষ্য বলে। যেমন—ইঁদুর, বিড়াল, বানর, সিংহ, বাঘ ইত্যাদি।
খ. অজীব বিশেষ্য :
যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো ধারণাযোগ্য ও ইন্দ্রিগ্রাহ্য কিংবা নির্জীব বস্তু
বোঝায়, তাকে অজীব বিশেষ্য বলে।
যেমন—বাড়ি, গাড়ি, শাড়ি, বই, খাতা, কালি, কলম, আকাশ ইত্যাদি।
৩। বিশেষণ কাকে বলে? কত প্রকার
ও কী কী? লেখ।
যে শব্দ দ্বারা বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়ার
দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাপ ইত্যাদি প্রকাশ পায়, তাকে বিশেষণ বলে। যেমন— নীল আকাশ,
সবুজ
বাংলা, প্রথম স্থান, দশ কেজি, শান্ত নদী।
বিশেষণকে প্রধানত তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে শ্রেণীকরণ করা হয়। যথা—
১. অর্থগতভাবে
২. ব্যুৎপত্তিগতভাবে
৩. অন্বয়গতভাবে
অর্থগতভাবে বিশেষণ প্রধানত দুই প্রকার। যথা—
ক. নামবিশেষণ :
যে বিশেষণ বিশেষ্য বা সর্বনামকে বিশেষিত করে, তাকে নামবিশেষণ বলে। যেমন—সবাই পাকা ফল খেতে পছন্দ করে। সবার বড় সে, কিন্তু কাজে খুব অলস।
খ. ভাববিশেষণ :
যে বিশেষণ অপর কোনো বিশেষণকে বিশেষিত করে, তাকে ভাববিশেষণ বলে। যেমন—তিনি খুব ভালো মানুষ।
ব্যুত্পত্তিগতভাবে বিশেষণ প্রধানত দুই প্রকার। যথা—
ক. সিদ্ধ বিশেষণ :
যে বিশেষণকে ব্যাকরণগতভাবে আর কোনো ক্ষুদ্রতর অংশে রূপান্তর বা বিভক্ত করা যায়
না, তাকে সিদ্ধ বিশেষণ বলে।
যেমন—ভালো, মন্দ, সোজা, বাঁকা, উঁচু, নিচু, লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, টক, ঝাল ইত্যাদি।
খ. সাধিত বিশেষণ :
যে বিশেষণকে ব্যাকরণগতভাবে আরো এক বা একাধিক ক্ষুদ্রতর অংশে রূপান্তর বা
বিভক্ত করা যায়, তাকে সাধিত বিশেষণ
বলে।
যেমন—চলন্ত বাস, ডুবন্ত নৌকা, উড়ন্ত পাখি, মেঘলা সকাল, ফুটন্ত পানি ইত্যাদি।
অন্বয়গতভাবে বিশেষণ প্রধানত দুই প্রকার। যথা—
ক. সাক্ষাৎ বিশেষণ :
যে বিশেষণ সরাসরি বাক্যের বিশেষিত শব্দের আগে বসে, তাকে সাক্ষাৎ বিশেষণ বলে। যেমন—গভীর জল, নীল শাড়ি, লাল জামা, সবুজ মাঠ, ছোট বাবু ইত্যাদি।
খ. বিধেয় বিশেষণ :
যে বিশেষণ বাক্যের বিধেয় অংশে বসে,
তাকে
বিধেয় বিশেষণ বলে। এ ধরনের বিশেষণের পর বাক্যে সাধারণত আর কোনো বিশেষ্য থাকে না।
যেমন—ছেলেটি খুব দুষ্ট। বাবা এখন অসুস্থ। আমটি খুব মিষ্টি।
সংখ্যাবাচক বিশেষণ :
যে বিশেষণ দ্বারা গণনা ও পরিমাপ সংক্রান্ত ধারণা প্রকাশ করা হয়, তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষণ বলে। সাত সমুদ্র, দশম শ্রেণি, পহেলা বৈশাখ, এক পোয়া।
৪। সর্বনাম শব্দ কাকে বলে?
উদাহরণসহ সর্বনাম শব্দের শ্রেনিবিভাগ আলোচনা কর।
বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়,
তাকে
সর্বনাম বলে। যেমন—উর্মি একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। সে নিয়মিত কলেজে যায়। তার একটি
ল্যাপটপ আছে।
সর্বনামকে প্রধানত তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ভাগ করা যায়। যথা—
১. অর্থগতভাবে
২. অন্বয়গতভাবে এবং
৩. পক্ষভেদে
অর্থগতভাবে সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ—
ক. ব্যক্তিবাচক সর্বনাম :
যে সর্বনাম বাক্যের পক্ষ বা পুরুষ নির্দেশ করে, তাকে ব্যক্তিবাচক সর্বনাম বলে। যেমন—আমি,
আমার, তুমি তোমার, সে, তোমরা, তারা, তিনি ইত্যাদি।
খ. আত্মবাচক সর্বনাম :
কর্তা নিজেই কোনো কাজ করেছে—এ ভাবটি জোর দিয়ে বোঝানোর জন্য যে সর্বনাম ব্যবহৃত
হয়, তাকে আত্মবাচক সর্বনাম বলে।
যেমন—স্বয়ং নিজে, খোদ, স্ব স্ব, আপনি ইত্যাদি।
গ. পারস্পরিক সর্বনাম :
দুই পক্ষের সহযোগ বা পারস্পরিকতা বোঝাতে যে সর্বনাম ব্যবহৃত হয়, তাকেই পারস্পরিক সর্বনাম বলে। যেমন—পরস্পর পরিচিত। ওরা
নিজেরা নিজেরাই সমস্যা মিটিয়ে ফেলবে।
ঘ. সকলবাচক সর্বনাম :
ব্যক্তি, বস্তু বা ভাবের সমষ্টি
বোঝাতে যে সর্বনাম ব্যবহৃত হয়, তাকেই সকলবাচক
সর্বনাম বলে। যেমন—সবাই কফি খেতে চাচ্ছে। সকলেই সাহায্য পেয়েছে।
চ. নির্দেশক সর্বনাম :
যে সর্বনাম বক্তার নিকট থেকে কাছের বা দূরের কিছু নির্দেশ করে, তাকে নির্দেশক সর্বনাম বলে। যেমন—এ, ও, ইনি, উনি ইত্যাদি।
ছ. অনির্দিষ্ট সর্বনাম :
অনির্দিষ্ট বা পরিচয়হীন কোনো কিছু বোঝাতে যে সর্বনাম ব্যবহার করা হয়, তাকে অনির্দিষ্ট সর্বনাম বলে। যেমন—এখানে কেউ নেই। আমার
কিছু বলার নেই।
অন্বয়গতভাবে সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ—
ক. প্রশ্নবাচক সর্বনাম :
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রশ্নের জন্য যে সর্বনাম ব্যবহৃত হয়, তাকে প্রশ্নবাচক সর্বনাম বলে। যেমন—কে যাবে? কারা খাবে?
খ. সংযোগবাচক সর্বনাম :
যে সর্বনাম দ্বারা দুটি বাক্যে সংযোগ ঘটানো হয়, তাকে সংযোগবাচক সর্বনাম বলে। যেমন—হাটে গিয়ে দেখি যে, সে চলে গেছে। আমি বলি কী, তুই আজ থেকেই যা।
গ. সাপেক্ষ সর্বনাম :
পরস্পর নির্ভরশীল যে যুগল সর্বনাম দুটি বাক্যাংশের সংযোগ ঘটায়, তাদের সাপেক্ষ সর্বনাম বলে। যেমন—যত চাও তত লও। যার কাজ
তারই সাজে। যেমন কর্ম তেমন ফল।
পক্ষভেদে সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ—
ক. বক্তাপক্ষ :
যে সর্বনাম দ্বারা বাক্যের বক্তা ও তার সমগোত্রীয়দের নির্দেশ করা হয়, তা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। যেমন—আমি, আমরা, আমাকে, আমাদিগকে, আমার, আমাদের, মোর, মোরা ইত্যাদি।
খ. শ্রোতাপক্ষ :
যে সর্বনাম দ্বারা বক্তার সামনে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত শ্রোতা ও তার
সমগোত্রীয়দের নির্দেশ করা হয়, তা এই শ্রেণির
অন্তর্ভুক্ত। যেমন—তুই, তুমি, তোরা, তোকে, তোমার, তোমরা, তোমাকে ইত্যাদি।
গ. অন্যপক্ষ :
যে সর্বনাম দ্বারা বক্তার সামনে অনুপস্থিত শ্রোতা ও তার সমগোত্রীয়দের নির্দেশ
করা হয়, তা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
যেমন—সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের ইত্যাদি।
৫। বাংলা ক্রিয়াপদের সংজ্ঞা
দাও এবং শ্রেণিবিভাগ দেখাও।
৬। ক্রিয়া কাকে বলে? অর্থ
সম্পর্কের দিক থেকে ক্রিয়ার ভাগগুলো আলোচনা কর।
যে শব্দ দ্বারা কোনো কিছু করা, হওয়া, ঘটা ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন—অনয় কাঁদছে। শিউলি
ফুল তুলছে। বৃষ্টি হবে।
নানা মানদণ্ডে ক্রিয়াকে বিভক্ত করা যায়। যথা—
ক. সমাপিকা ক্রিয়া :
যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে। যেমন—ছেলেরা বল খেলছে।
খ. অসমাপিকা ক্রিয়া :
যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে না। যেমন—আমি বাড়ি গিয়ে ভাত
খাব।
কর্মপদ সংক্রান্ত ভূমিকা অনুসারে -
ক. অকর্মক ক্রিয়া :
বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া কোনো কর্ম গ্রহণ করে না, তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন—সুমন খেলছে।
খ. সকর্মক ক্রিয়া :
বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া মাত্র একটি কর্ম গ্রহণ করে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন—অনি বাগান থেকে ফুল তুলছে।
গ. দ্বিকর্মক ক্রিয়া :
বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া দুটি কর্ম গ্রহণ করে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন—মুন্নি মাসুমকে একটি কলম
দিয়েছে।
ঘ. প্রযোজক ক্রিয়া :
কর্তার যে ক্রিয়া অন্যকে দিয়ে করানো হয়,
তাকে
প্রযোজক বা নিজন্ত ক্রিয়া বলে। যেমন—মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
গঠন বৈশিষ্ট্য অনুসারে -
ক. যৌগিক ক্রিয়া :
একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া যদি একত্রে একটি বিশেষ বা সম্প্রসারিত
অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে যৌগিক
ক্রিয়া বলে। যেমন—ধরে ফেলছে, উঠে পড়ছে, নেমে পড়েছে, খেয়ে ফেলেছে ইত্যাদি।
খ. সংযোগমূলক ক্রিয়া :
বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধনাত্মক শব্দের
সাথে সমাপিকা ক্রিয়া যোগ করে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে। যেমন—নাচ করা, গান গাওয়া, মশা মারা, ছেলে ধরা ইত্যাদি।
স্বীকৃতি অনুসারে -
ক. অস্তিবাচক ক্রিয়া :
যে ক্রিয়া দ্বারা অস্তিবাচক বা হ্যাঁ-বোধক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে অস্তিবাচক ক্রিয়া বলে। যেমন—সীমা এসেছে।
খ. নেতিবাচক ক্রিয়া :
যে ক্রিয়া দ্বারা নেতিবাচক বা না-বোধক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে নেতিবাচক ক্রিয়া বলে। যেমন—রিমা আসেনি।
৭। ক্রিয়া-বিশেষণ কাকে বলে?
উদাহরনসহ ক্রিয়াবিশেষণের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
যে শব্দ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে,
তাকে
ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—গাড়িটি দ্রুত চলতে শুরু করল। অনিম জোরে হাঁটে। সামিয়া
গুনগুনিয়ে গান গাইছে।
গঠনের দিক থেকে ক্রিয়া বিশেষণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
১. একপদী ক্রিয়া বিশেষণ :
একটি মাত্র পদ দিয়ে যে ক্রিয়া বিশেষণ গঠিত হয়, তাকে একপদী ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—আস্তে, জোরে, ধীরে, সহজে, সাগ্রহে, সানন্দে ইত্যাদি।
২. বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ :
একের অধিক পদ দিয়ে যে ক্রিয়া বিশেষণ গঠিত হয়, তাকে বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—আস্তে আস্তে, জোরে জোরে, ধীরে ধীরে, ভয়ে ভয়ে, থেমে থেমে ইত্যাদি।
অর্থ ও অন্বয়গতভাবে ক্রিয়া বিশেষণকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—
১. ধরনবাচক ক্রিয়া বিশেষণ :
যেভাবে বা যেমনভাবে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়,
তাকে
ধরনবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—ফাহিম নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ডবেগে
ঝড়টি রেলক্রসিং অতিক্রম করেছে।
২. কালবাচক ক্রিয়া বিশেষণ :
যে সময়টিতে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে কালবাচক ক্রিয়া
বিশেষণ বলে। যেমন—তিনি সকালেই বেরিয়ে গেছেন। সুমি আগামীকাল খুলনা যাবে।
৩. স্থানবাচক ক্রিয়া বিশেষণ :
ক্রিয়া সংঘটনের স্থানকে স্থানবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—জেলেরা অনেক আগেই
নদীতে নেমেছে। তিনি খুব কষ্ট করে গাছে চড়েছেন।
৪. সংযোজক ক্রিয়া বিশেষণ :
যে ক্রিয়া বিশেষণ একাধিক বাক্যাংশকে সংযুক্ত করে, তাকে সংযোজক ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—এখন আমার কোনো কাজ নেই, অবশ্য থাকার কথাও নয়।
৫. না-বাচক ক্রিয়া বিশেষণ :
যে ক্রিয়া বিশেষণ বাক্যকে না-বাচক বৈশিষ্ট্য দেয়। যেমন—আমি আর রাগ করব না। তার
সাথে আমার কোনো কথা হয়নি।
৮। যোজক কাকে বলে? যোজকের
শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ আলোচনা কর।
যে শব্দ একটি বাক্যাংশের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যাংশ অথবা বাক্যস্থিত একটি
শব্দের সঙ্গে অন্য একটি শব্দের সংযোজন,
বিয়োজন
বা সংকোচন ঘটায়, তাকে যোজক বলে।
যেমন—সারা দিন বৃষ্টি হলো তবুও গরম গেল না। তুমি খাবে আর তামান্না পড়বে। ব্যাগটা
শক্ত করে ধরো, নইলে পড়ে যাবে।
অর্থ এবং সংযোজনের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যোজন পাঁচ প্রকার -
১. সাধারণ যোজক :
যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশকে
সংযুক্ত করা যায়, তাকে সাধারণ যোজক
বলে। যেমন—সে ঢাকা যাবে এবং চিড়িয়াখানা দেখবে।
২. বৈকল্পিক যোজক :
যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশের
মধ্যে বিকল্প নির্দেশ করা হয়, তাকে বৈকল্পিক যোজক
বলে। যেমন—শরীর ভালো হলে তুমি কাজ করবে নতুবা বসে থাকবে।
৩. বিরোধমূলক যোজক :
যে যোজক দ্বারা দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটিয়ে দ্বিতীয়টি দ্বারা প্রথমটির সংশোধন বা
বিরোধ নির্দেশ করা হয়, তাকে বিরোধমূলক যোজক
বলে। যেমন—তোমাকে টাকা দিতে চাইলাম কিন্তু নিলে না।
৪. কারণবাচক যোজক :
যে যোজক দ্বারা একটি বাক্যের কারণ হিসেবে অপর একটি বাক্যের সংযোগ ঘটানো হয়, তাকে কারণবাচক যোজক বলে। যেমন—তুমি বাইরে যাবে না কারণ
সেখানে এখন কারফিউ চলছে।
৫. সাপেক্ষ যোজক :
পরস্পর নির্ভরশীল যে যোজকগুলো একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়, তাকে সাপেক্ষ যোজক বলে। যেমন—যদি পরিশ্রম করো, তবে ফল পাবে।
৯। অনুসর্গ কী? অনুসর্গের
শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
যে শব্দ কখনো স্বাধীনরূপে, আবার কখনো বা
শব্দবিভক্তির ন্যায় ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে অনুসর্গ বলে। যেমন—দিনের পরে রাত আসে। রান্নার জন্য
রাঁধুনি ব্যাকুল।
ব্যুত্পত্তিগতভাবে অনুসর্গ দুই প্রকার
১. বিশেষ্য অনুসর্গ
২. ক্রিয়া অনুসর্গ
বিশেষ্য অনুসর্গ :
ক্রিয়া ছাড়া অন্যান্য শব্দ থেকে যে অনুসর্গগুলো এসেছে। যেমন—এখন ওদের মাথার
উপরে কোনো ছাদ নেই।
বিশেষ্য অনুসর্গ তিন ধরনের—
ক. সংস্কৃত অনুসর্গ :
যে বিশেষ্য অনুসর্গ সংস্কৃতি থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে, তাদের
সংস্কৃত অনুসর্গ বলে। যেমন—অপেক্ষা, উপরে।
খ. বিবর্তিত অনুসর্গ :
যে বিশেষ্য অনুসর্গ সংস্কৃতি থেকে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে।
যেমন—আগে, বই ইত্যাদি।
খ. বিবর্তিত অনুসর্গ :
যে বিশেষ্য অনুসর্গ সংস্কৃতি থেকে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে।
যেমন—আগে, বই ইত্যাদি।
গ. ফারসি অনুসর্গ :
যে বিশেষ্য অনুসর্গ ফারসি থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে। যেমন—দরুন, বদলে।
ক্রিয়া অনুসর্গ :
ক্রিয়া থেকে যেসব অনুসর্গ উত্পন্ন হয়,
তাদের
ক্রিয়া অনুসর্গ বলে। যেমন: তোমরা সবাই মন দিয়ে লেখাপড়া করো।
১০। আবেগ শব্দ বলতে কী বোঝ?
কী কী অর্থে আবেগ শব্দ ব্যবহৃত হয় লেখ।
অথবা, উদাহরণসহ আবেগ শব্দের
শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
অথবা, আবেগ-শব্দ কাকে বলে?
আবেগ শব্দের শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ বুঝিয়ে লিখ।
যে শব্দ বাক্যের অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে
স্বাধীনভাবে মনের বিশেষ ভাব বা আবেগ প্রকাশ করে, তাকে আবেগ শব্দ বলে।
যেমন—হায়! এটা তুমি কী করলে! উঃ! কী অবস্থা! বাহ্! কী সুন্দর দৃশ্য।
অর্থ প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় -
১. সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ :
যে আবেগ শব্দ দ্বারা অনুমোদন, সম্মতি, সমর্থন ইত্যাদি ভাব প্রকাশ পায়, তাকে সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—উঁহু, আমার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়!
২. প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ :
যে আবেগ শব্দ প্রশংসা ও তারিফের মনোভাব প্রকাশ করে, তাকে প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—শাবাশ! সামনে এগিয়ে
যাও।
৩. বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ :
অবজ্ঞা, ঘৃণা, বিরক্তি ইত্যাদি মনোভাব যে আবেগ শব্দ দ্বারা প্রকাশ পায়, তাকে বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—কী জ্বালা, তোমার যন্ত্রণায় আর বাঁচি না!
৪. ভয় ও যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ :
যে আবেগ শব্দ দ্বারা আতঙ্ক, যন্ত্রণা, কাতরতা প্রকাশ পায়,
তাকে ভয়
ও যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—উঃ,
কী
যন্ত্রণা, আর সইতে পারছি না!
৫. বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ :
যে আবেগ শব্দ বিস্ময় ও আশ্চর্য হওয়ার মনোভাব প্রকাশ করে। যেমন—আরে, তুমি আবার কখন এলে!
৬. করুণাসূচক আবেগ শব্দ :
করুণা বা সহানুভূতিমূলক মনোভাব প্রকাশ পায় যে আবেগ শব্দে, তাকে করুণাসূচক আবেগ শব্দ। যেমন—আহা! ছেলেটার বাবা-মা কেউ
নেই।
৭. সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ :
সম্বোধন বা আহ্বান করার ক্ষেত্রে যে আবেগ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন—ওহে! কোথায়
যাচ্ছ?
৮. আলংকারিক আবেগ শব্দ :
যে আবেগ শব্দ বাক্যের অর্থের কোনো রকম পরিবর্তন না ঘটিয়ে কোমলতা, মাধুর্য ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য এবং সংশয়, অনুরোধ, মিনতিসূচক মনোভাব প্রকাশের জন্য অলংকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন—দূর পাগল! এমন কথা কি কেউ বলে?