ছাত্রজীবনে নিজের আয় থাকলে অনেকক্ষেত্রে তা কাজে আসতে পারে। আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে চায় সবাই, তাই ছাত্রজীবন থেকে পড়াশোনার ক্ষতি না করেই আয়ের লক্ষ্যে কাজ করা উচিত। এই পোস্টে ছাত্রজীবনে আয় করার সেরা কিছু উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
অনলাইন বা অফলাইন টিচিং
আপনি যদি কোনো বিষয়ে খুব ভালোভাবে দক্ষতা রাখেন, তবে উক্ত বিষয় অন্যদের শিখিয়ে ছাত্রজীবনে আয় করতে পারেন। এই শেখানোর বিষয় হতে পারে কোনো ডিমান্ডিং স্কিল কিংবা সাধারণ পড়ালেখার কোনো বিষয়। অনলাইনে বা অফলাইনে টিচিং এর পাশাপাশি বিভিন্ন দক্ষতানির্ভর কোর্স তৈরী করে তা বিক্রি করে আয় করা যায়।
ওয়েবসাইট তৈরী
ওয়েবসাইট তৈরী করে একাধিক উপায়ে ছাত্রজীবনে আয় করা সম্ভব। প্রথমত ব্লগ তৈরী করে উক্ত ব্লগে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় সম্ভব। এছাড়া স্পন্সরড পোস্ট থেকে আয় করা যায়। ওয়েবসাইট থেকে আয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন ধৈর্য ধরে কাজ করা লাগে। তাই আপনার হাতে যদি যথেষ্ট সময় থাকে, তবে ছাত্রজীবনে ওয়েবসাইট গড়ে তোলার কাজে নামতে পারেন। প্রতিদিন অল্প কিছু সময় প্রদান করে কয়েক মাসের মধ্যে একটি ওয়েবসাইট আয় করার মত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ডেলিভারি ড্রাইভিং
বর্তমানে উবার, পাঠাও এর মত সেবা বিপুল জনপ্রিয়। আপনার কাছে যদি একটি সাইকেল, বাইক বা কার থাকে, সেক্ষেত্রে সেটি ব্যবহার করে ছাত্রাবস্থায় ভালো অংকের আয় করতে পারেন। আপনি চাইলে ফুড ডেলিভারি বা সরাসরি ড্রাইভিং এর কাজ করতে পারেন বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। এক্ষেত্রে আপনি যে সময় কাজ করতে চান, উক্ত সময়ে কাজের স্বাধীনতা রয়েছে।
ফাইভারে গিগ খোলা
ফাইভারে গিগ খুলে ফ্রিল্যান্সিং করে ছাত্রাবস্থায় আয় করতে পারেন। আপনার যেকোনো দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ফাইভারে গিগ খুলে তা থেকে আয়ের পথ তৈরী করতে পারেন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে যেকেউ তাদের যেকোনো ধরনের সেবা প্রদান করতে পারে। তাই আপনি যে বিষয়ে দক্ষ উক্ত বিষয়ে ফাইভারে গিগ খুলে ফেলুন আজকেই।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেট হতে পারে ছাত্রজীবনে আয়ের অন্যতম একটি উপায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে যদি আপনার যথেষ্ট পরিচিতি থাকে বা আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকলে সেক্ষেত্রে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আয়ের একটি অসাধারণ উপায় হতে পারে।
নোটস সেল করা
আপনার নোটস বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করে আয় করতে পারেন বাড়তি অর্থ। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দামসহ নোট আপলোড করা যায় ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা উক্ত নোট ডাউনলোড করলে তা থেকে অর্থ পাওয়া যায়। Nexus Notes ও Stuvia এর মতো ওয়েবসাইটে যেকেউ বিনামূল্যে নোটস আপলোড করতে পারে। নোট থেকে প্রাপ্ত লাভের অংশ আপনার সাথে শেয়ার করবে এসব ওয়েবসাইট।
প্রতিযোগিতা
আপনার লুকানো প্রতিভা ফেলে না রেখে এখনই অংশগ্রহণ করুন কোনো প্রতিযোগিতায়। বিভিন্ন অনলাইন ও ফিজিক্যাল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বেশ ভালো অংকের অর্থ জেতা সম্ভব প্রাইজ মানি হিসেবে। ছাত্রজীবনে এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজের দক্ষতা পরীক্ষার পাশাপাশি আয় ও এচিভমেন্ট অর্জন ও সম্ভব।
ডোমেইন কেনা-বেচা
ডোমেইন ফ্লিপিং একটি সেরা আয়ের পথ হতে পারে যদি আপনি ঠিকমত এই কাজ করতে পারেন। ডোমেইন কেনা-বেচা থেকে আয় করতে প্রথমে কোনো সম্ভাবনাময় ডোমেইন কিনতে পারে GoDaddy বা Namecheap এসব সাইট থেকে। খুব কম খরচে ডোমেইন কেনা যায়, যা পরবর্তীতে কয়েকশো গুণ দামে পর্যন্ত বিক্রি করা সম্ভব। তবে ডোমেইন কেনার ক্ষেত্রে যেসব ডোমেইন ভবিষ্যতে ভালো অর্থের বিনিময়ে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব ডোমেইন যাচাই-বাছাই করে কেনা উচিত।
স্টক ফটোগ্রাফি
আপনি যদি ফটোগ্রাফিতে দক্ষ হন, তবে শাটারস্টক, এডোবি স্টক, ইত্যাদি স্টক ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করে বেশ ভালো মানের আয় করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে আপনি একবার প্রোডাক্ট, অর্থাৎ ছবির জন্য কাজ করবেন ও এর থেকে প্যাসিভ ইনকাম পাবেন। অর্থাৎ আয়ের জন্য আপনাকে সার্বক্ষণিক কাজ করতে হচ্ছেনা।
ইউটিউব
যেকোনো ব্যক্তি একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করতে পারে। তবে ইউটিউব চ্যানেল খুলেই উক্ত চ্যানেল থেকে আয় শুরু হবে এমনটা ভাবা সম্পূর্ণ বোকামি। ইউটিউবে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে থাকলে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম এর পাশাপাশি আরো বিভিন্ন উপায়ে ইউটিউব থেকে আয় সম্ভব। এছাড়াও ইউটিউবিং থেকে অর্জিত বিভিন্ন দক্ষতা, যেমনঃ ভিডিও এডিটিং ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে বা কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য করে আয় করা যায়।
রাইটিং
ফ্রিল্যান্স রাইটিং একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং পেশা। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এই কাজটি বেশ মানানসই। বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ব্লগের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে রাইটিং এর কাজ পাওয়া যায়। আর প্রায় যেকোনো বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং রাইটিং করা যায়। এছাড়াও আপনার গ্রামার ও ভাষা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকলে এডিটিং বা সম্পাদনার কাজ করেও বেশ ভালো মানের অর্থ আয় সম্ভব।
গ্রাফিক ডিজাইন
গ্রাফিক ডিজাইন একটি জনপ্রিয় সেবা ও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে সম্পূর্ণ বিশ্বে। ছাত্র হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম ডিজাইনার হিসেবে কাজ নিতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে আয় করতে পারেন।
অনলাইন ব্যবসা
ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে বেশ সহজে একটি অনলাইম স্টোর সেটাপ করা যায়। চাইলে এই ফিচারগুলোকে কাজে লাগিয়ে নিজের কোনো একটি ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারেন। এতে ফিজিক্যাল স্টোর পরিচালনার বা সময় মেনে চলার মত কোনো সমস্যা থাকছেনা। শুধুমাত্র প্রোডাক্টের অর্ডার আসলে তা কাস্টমারের নিকট পৌছে দেওয়া হচ্ছে অনলাইন ব্যবসার কাজ। তাই ছাত্রজীবনে অনলাইন ব্যবসা শুরু করা বেশ লাভজনক হতে পারে।
ড্রপশিপিং
প্রোডাক্ট খুঁজে বের করে তা বিক্রি করার মত যথেষ্ট সময় না থাকলে ড্রপশিপিং আয়ের আরেকটি পথ হতে পারে। ড্রপশিপিং এর ক্ষেত্রে অর্ডার নিয়ে তা থার্ড পার্টির মাধ্যমে ডেলিভারি করা হয়। অর্থাৎ এতে প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এর কোনো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছেনা।
মেডিকেল
চিকিৎসা খাতে লোকবলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে আমাদের দেশে। তাই বিভিন্ন হেলথ সেন্টার ও হাসপাতাল পার্ট টাইম চাকরি প্রদান করে থাকে। ছাত্রাবস্থায় রিসেপশনিস্ট বা এসিস্ট্যান্ট এর মত কাজ করে বেশ ভালো অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি আয় ও সম্ভব।
রেস্টুরেন্ট
দেশের অনেক রেস্টুরেন্টে পার্ট টাইম চাকরির সুযোগ রয়েছে, যা একজন ছাত্রের জন্য আয়ের আদর্শ একটি উপায়। ছাত্রজীবনে পড়ালেখার পাশাপাশি রেস্টুরেন্টে কাজ করে আয় করতে পারেন।
শপিং সেন্টারে কাজ করা
ছাত্রজীবনে আয়ের একটি সেরা উপায় হলো দোকানে শপিং সেন্টারে পার্ট টাইম চাকরি করা। দোকানে পার্ট টাইম কাজ করে আয়ের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব। বিভিন্ন দোকানে পার্ট টাইম চাকরির বিজ্ঞপ্তি অনলাইন ও অফলাইনে পেয়ে যাবেন।
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার সেরা সময় কিন্তু ছাত্রজীবন। অনেকে এই বিষয়টিকে ছোট করে দেখলেও বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ এই বিষয়টিকে তাদের প্যাশন থেকে পেশায় পরিণত করেছে। বিভিন্ন প্রোডাক্ট প্রোমোট করার পাশাপাশি নিজের প্রোডাক্ট ও বিক্রি করতে পারেন একজন ইনফ্লুয়েন্সার। এছাড়া কনটেন্ট তৈরী করে অডিয়েন্স তৈরী করে নিজস্ব ব্র্যান্ডিং ও গড়ে তোলা সম্ভব, যা সারাজীবন বিভিন্ন কাজে আসবে।