প্রশ্ন: আমি একজন ছেলে। আমার বিয়ের বয়স হয়েছে। কিন্তু পরিবার বিয়ে দিতে চাচ্ছে না। এখন আমার করণীয় কী?
উত্তর:
আপনি যদি বিয়ে না করার কারণে অশ্লীলতা, অবৈধ যৌনাচার ও নানা গুনাহে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করেন তাহলে আপনার জন্য বিয়ে করা ফরজ। এ ক্ষেত্রে প্রথমত: আপনার পিতা-মাতা এবং পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে তাদেরকে রাজি করাতে চেষ্টা করবেন। সবার সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে যদি বিয়ে হয় তাহলে তা নি:সন্দেহেে অতি উত্তম। এতে পারিবারিক সৌহার্দ ও সম্প্রতি অটুট থাকে।
এ ক্ষেত্রে বাবা-মার কর্তব্য, বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলের আগ্রহ ও পছন্দকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিয়েতে তাকে সুপরামর্শ দেয়া ও বিয়েতে সার্বিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা। হাম্বলী মাজহাবের ফতোয়া অনুযায়ী ছেলে-মেয়ে উভয়ের বিয়ে দেয়া সামর্থ্যবান পিতার জন্য ওয়াজিব।
কিন্তু তারা কেউ এতে সম্মতি না দিলে পাপাচার থেকে আত্মরক্ষার স্বার্থে নিজ সিদ্ধান্তে আপনার পছন্দনীয় মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ে করে নিতে পারেন। শরিয়তের দৃষ্টিতে এতে কোনও সমস্যা নাই। কারণ ইসলামে পুরুষের বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য তার পিতা বা অভিভাবকের অনুমতি নেয়াকে শর্ত করে নি। (অধিক বিশুদ্ধ মতে, নারীর বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য অভিভাবকের সম্মতি শর্ত)
এরপর প্রয়োজনে আলাদা সংসার গড়ুন। শরয়ী দৃষ্টিতে এতে দোষের কিছু নাই।
প্রশ্ন আসতে পারে, বাবা-মার সম্মতি ছাড়া ছেলে বিয়ে করলে তো তারা কষ্ট পাবে। এতে কি সে গুনাহগার হবে?
উত্তরে বলব, ইসলাম প্রদত্ত অধিকার পালনের ক্ষেত্রে বাবা-মা যদি কষ্ট পায় এতে ছেলে গুনাহগার হবে না। কেননা সে আল্লাহর নিষেধ কৃত কোন কাজ করেনি। বরং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য ইসলামের বিধানের আলোকে সে বৈধভাবে বিয়ে করেছে।
◉ বিয়ের সামর্থ্য না থাকলে করণীয়:
যদি কারও বিয়ে করার জন্য যথোপযুক্ত আর্থিক ও মানসিক প্রস্তুতি এবং সার্বিক পরিস্থিতি শামাল দেওয়ার মত অবস্থা না থাকে তাহলে তার জন্য করণীয় হল,
◍ ১. ধৈর্যের সাথে বিয়ের জন্য আর্থিক, শারীরিক, মানসিক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকা।
◍ ২. এ সময় নিজের প্রবৃত্তির তাড়নাকে দুর্বল রাখার জন্য নফল রোজা রাখা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ.
‘‘হে যুবকেরা, তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ, বিয়ে চক্ষুকে সংযত রাখতে এবং লজ্জা স্থানকে সংরক্ষণ করতে সহায়ক। আর যে ব্যক্তি এ সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কারণ, তা যৌনেন্দ্রীয় দমনকারী।’’ [বুখারী ও মুসলিম]◍ ৩. পাপাচার সৃষ্টির সকল উপায়-উপকরণ থেকে দূরে থাকা।
◍ ৪. সবসময় নির্জনে ঘরে বসে না থেকে দীন ও দুনিয়াবি উপকারী কাজে ব্যস্ত থাকা।
◍ ৫. সৎ, দীনদার, চরিত্রবান ও তাকওয়া বান বন্ধুদের সাথে সসুম্পর্ক রাখা এবং খারাপ, দীন ও চরিত্রহীন বন্ধুদের থেকে দূরে থাকা
◍ ৬. এবং আল্লাহর কাছে বিয়ের জন্য তাওফিক কামনা করে দুআ করা।
মনে রাখতে হবে, কেউ যদি নিজেকে পবিত্র রাখা নিয়তে বিয়ে করতে চায় তাহলে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন এবং আর্থিক দিক অভাব মুক্ত করে দেন।
◈ আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ثَلاَثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللَّهِ عَوْنُهُمُ الْمُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُكَاتَبُ الَّذِي يُرِيدُ الأَدَاءَ وَالنَّاكِحُ الَّذِي يُرِيدُ الْعَفَافَ
“আল্লাহ তাআলা তিন প্রকারের মানুষকে সাহায্য করা নিজের কর্তব্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। যথা:(ক) আল্লাহর পথে জিহাদ কারী,
(খ) মুকাতাব গোলাম- যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে
(গ) এবং বিয়েতে আগ্রহী লোক- যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়।” [সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২৫/ জিহাদ,পরিচ্ছেদ: ২০. মুজাহিদ, মুকাতাব গোলাম ও বিবাহ ইচ্ছুক ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তা'আলার সাহায্য, ইবনে মাজাহ ২৫১৮, মিশকাত ৩০৮৯, গায়াতুল মারাম ২১০। সনদ: হাসান]
◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَنكِحُوا الْأَيَامَىٰ مِنكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ ۚ إِن يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
“তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তাদের বিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তাহলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” [সূরা নূর: ৩২]নিশ্চয় আল্লাহ তাওফিক দানকারী। আমিন।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
Tags:
Islam