শায়খ আশরার রশিদ এর বিষ পান করার ঘটনার সত্যতা যাচাই

শায়খ আশরার রশিদ এর বিষ পান করার ঘটনার সত্যতা যাচাই

গত কয়েকদিন শায়খ আশরার রশিদ এর বিষ পান করার ঘটনাটা নতুন করে ভাইরাল হয়েছে।  বিষয়টা একটু খতিয়এ দেখার চেষ্টা করলাম।


জানতে পারলাম, ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারে মধ্যে মদিনা সোসাইটি নামের একটা সংগঠন ২০২০ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারী একটি ধর্মীয় বিতর্কের আয়োজন করেছিল। এখানে ইসলাম ধর্মের পক্ষে ২ জন ( আশরার রশিদ এবং নাম না জানা তার এক সহকর্মী) আর খৃষ্টান ধর্মের পক্ষে ২ জন ( Hatun Tash + Caleb Corneloup) অংশ নিয়েছিল।


ইউটিউবে এই বিতর্কের আড়াই ঘন্টার ভিডিও রয়েছে। 


https://www.youtube.com/watch?v=Tk0mtJ7cdl4


১ ঘন্টা ৫৪ মিনিটের মাথায় আশরার রশিদ তার ব্যাগ থেকে নীল রঙের এই বিষের বোতল বের করেন। অর্থাৎ, এটা রশিদ সাহেব এনেছিলেন। খৃষ্টান দল এই বিষ আনে নাই।


ওই সময় থেকেই বিষ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধর্মীয় রেফারেন্স দেখিয়ে আশরার রশিদ হাতুন দের চ্যালেঞ্জ করেন বিষ খাওয়ার জন্য। 


২ ঘন্টা ১৬ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের দিকে হাতুন কিছু রেফারেন্স দিয়ে পালটা চ্যালেঞ্জ করে বলে,  এখন, মিস্টার রাশিদ কি বিষ খেয়ে দেখাবে? 


এ সময় আশরার রাশিদ উঠে দাঁড়িয়ে বোতল থেকে চুমুক দেন। 


হাতুন তাশ এ সময়ে বলতে থাকে, ওকে, এখন কেউ একজন একটা খেজুর নিয়ে আসো। আর কেউ একজন বোতলটা চেক করে দেখো, আসলেই এখানে বিষ আছে কি নাই! 


তবে এ সময় মদিনা সোসাইটির উপস্থাপক কন্ট্রোল নেন, এবন বলেন, I think we should leave it here.  I don't know what the public liabilities here.  এরপর তিনি বিষের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে প্রশ্নোত্তর এ চলে যান। 


বাকি অংশে বিষের বোতল নিয়ে কেউ টেস্ট করে নাই যে ওর মধ্যে আসলে কি আছে। তবে বিষের বোতল খাওয়ার একটু পরেই আশরার রশিদ কে অন্য বোতল থেকে পানি পান করতে দেখা যায়। 


১. এই গুজবে যা দাবি করা হয়েছে, তেমনটি, অর্থাৎ খৃষ্টান দল বিষের বোতল নিয়ে আসেনি। ওটা আশরার রশিদ নিজেই নিয়ে এসেছে। কেউ সেই বোতল চেক করে দেখেনি যে ওর মধ্যে আসলেই বিষ আছে নাকি বিষের বোতলে অন্য জিনিস আছে।


২. ধরে নিলাম, ওটা বাজার থেকে কেনা ইনট্যাক্ট বিষ। 


ওয়েল, এই বিষের নাম কি? দেখা যাক। 


জুম-টুম করে বহু কষ্টে দেখে যা মনে হল, এই বিষের নাম Rat Tox. নীল বোতলের গায়ে এই নাম টা কষ্ট করে পড়া যাচ্ছে।


আমাজন ডট কমে খুজতে গিয়ে দেখা গেল,  র‍্যাট টক্স নামে আসলেই একটা বিষ আছে, আমাজনে বিক্রি হয়।


https://www.amazon.com/Hip-Flask-Plus-8oz-Rat/dp/B00PKJVALY


 সেই বিষের বোতলের গায়ে লেখা আছে, এই বোতলের মধ্যে ১ আউন্স ANTU নামক বিষ আছে। ANTU মানে হল Alpha-Napthylthoiourea.  রাসায়নিক সংকেত C11H10N2S. 


হ্যা, এটা বিষাক্ত কেমিকাল, তবে একেক প্রাণীকে মারার জন্য এর ডোজ একেকরকম। ইদুর মারার জন্য এক কেজিতে ২.৪৭ মিলিগ্রাম বিষ দিলেই মরে যায়। কিন্তু মানুষ মারার জন্য এক কেজিতে ৫৮৮ মিলিগ্রাম লাগবে।


https://en.wikipedia.org/wiki/Alpha-Naphthylthiourea


আশরার রশিদ এর ওজন ৮০ কেজি হলে, তাকে মারার জন্য ৮০*৫৮৮= ৪৭ গ্রাম বিষ লাগবে।


আমাজনের ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, এক বোতল লিকুইড র‍্যাট টক্স এর মধ্যে এক আউন্স (২৮ গ্রাম) সলুশন থাকে.  এই এক আউন্স এর মধ্যে ২০% হল ANTU,  ( লেখা আছে,  active ingredients - alpha neupthyl thiourea -20%) 


অর্থাৎ সব মিলিয়ে এখানে ANTU আছে  ২৮ গ্রাম*২০% = ৫.৬৬৯ গ্রাম


এটা কোনো মানুষকে মারার জন্য যথেষ্ট নয়। মিনিমাম ৪৭ গ্রান হলে মরে যেত। কিন্তু জাস্ট সাড়ে ৫ গ্রাম, বা এক বোতল বিষ ততটুকু বিষ দিতে পারছে না। তাই আশরার রশিদ বা কোনো মানুষেরই কোনো ক্ষতি হবে না এখানে।


( ৮ কেজি ওজনের কোনো বাচ্চাকে মারার জন্য লাগবে ৫৮৮*৮ = ৪.৭ গ্রাম, যা এক বোতল র‍্যাট টক্সে কভার করবে। তাই এই বোতলে এডাল্টদের কিছু না হলেও বাচ্চাদের মৃত্যুর কারন হতে পারে) 


ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে warfarin নামে আরেকটা কেমিকাল পেলাম। এটা ইদুরের জন্য ইদুর মারার বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু মানুষের জন্য এটা রক্ত জমাট বাধার প্রতিষেধক ওশুধ ( এ্যান্টি কোয়াগুলান্ট)   হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, warfarin নামক এই ইদুর মারা বিষটাই কিছু মানুষ ওশুধ হিসেবে খাচ্ছে, কেউ মরতেছে না বরং উপকার পাচ্ছে। 


৩. বিষ খাওয়ার আগে / পরে আজওয়া প্রজাতির খেজুর খেলে বিষে কোনো ক্ষতি হবে না - এটা অনেকেই বিশ্বাস করেন। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়নি। আজওয়া খেজুরের মধ্যে কোনো বিষ নাশক এন্টি ভেনম পাওয়া যায়নি৷ 


-------


একটু ভিন্ন টপিক।


পটাশিয়াম সায়ানাইড বিষকে ধরা হয় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিষ। তবে এটাকে ফাকি দেওয়ার ও সিস্টেম আছে। 


KCN ডাইরেক্ট মানুষকে খুন করে না। এটা পেটের মধ্যে গিয়ে সেখানে থাকা HCl এর সাথে বিক্রিয়া করে HCN তৈরি করে। তারপর সেই HCN মানুষকে মেরে ফেলে। 


ইউজুয়ালি সবার পেটে ন্যাচারালি  HCl তৈরি হয়৷ কারো পেটে যদি HCl তৈরি না হয়, তাহলে সেই রোগকে বলে Achlorhydria 


এই এ্যাক্লোরোহাইড্রিয়া রোগীকে পটাশিয়াম সায়ানাইড খাওয়ালেও সে বেচে থাকবে :)


জিম করবেট এর লেখা দি ম্যান ইটিং লেপার্ড অফ রুদ্রপ্র‍য়াগ বই থেকে জানা যায়, রুদ্রপ্রয়াগ এর একটা চিতাকে মারার জন্য তার খাবারে সায়ানাইড মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। সব খাবার খেয়েও ওই চিতাটা বেচে ছিল। তার কিছু হয়নাই।


রাশিয়ার রাস্পুতিন কেও সায়ানাইড মেশানো মদ খাওয়ানোর পরেও সে বেচে ছিল। ধারনা করা হয়, সে ও এ্যাক্লোরোহাইড্রিয়া রোগী ছিল।

إرسال تعليق

أحدث أقدم